বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা দেশে ঢোকানো হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।
সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, পার্শ্ববর্তী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সহায়তায় বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার সমমূল্যের জাল নোট বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
তার বক্তব্য অনুযায়ী, জাল নোটগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যে খালি চোখে চেনা দুষ্কর। এমনকি দেশের ব্যাংকে ব্যবহৃত অটোমেটেড মেশিনেও এসব নোট শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি জানান, এসব ভুয়া নোট তৈরির সময় বাংলাদেশের আসল মুদ্রার মতো একই মানের কাগজ, নিরাপত্তা সুতার আবরণ, এবং হুবহু মিল থাকা হলোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে সেগুলো দেখতে সম্পূর্ণ আসল টাকার মতো।
জুলকারনাইন সায়েরের দাবি, এই নোটগুলো ভারতের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সরকারি মুদ্রা ছাপাখানায় তৈরি হয়েছে, যেখানে সেই দেশের নিজস্ব মুদ্রাও ছাপানো হয়। সেখান থেকে সুপরিকল্পিতভাবে সীমান্ত পেরিয়ে নোটগুলো বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে।
তার পোস্টে কয়েকটি ছবি ও স্ক্রিনশটও যুক্ত ছিল। এক স্ক্রিনশটে হিন্দি ভাষায় লেখা বার্তায় দেখা যায়—এক ব্যক্তি ‘পার্সেল’ নেওয়ার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে বলছে এবং বিকাশের মাধ্যমে ৫০০ টাকা দিয়ে অর্ডার কনফার্ম করার কথা বলছে। সেখানে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠালে দুই দিনের মধ্যে মালামাল পৌঁছে দেওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
সায়েরের ভাষ্যমতে, এভাবে খুব কম দামে জাল টাকা বাংলাদেশের দালাল চক্রের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য—অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করা, সন্ত্রাস ও নাশকতাকে অর্থায়ন করা এবং সামগ্রিকভাবে দেশের ভিত দুর্বল করে তোলা।
তিনি জানান, বিষয়টি সীমান্তরক্ষী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা ইউনিটগুলোর জানা আছে এবং তারা প্রতিরোধে কাজ করছে। তবে হুমকি এতটা বড় যে এখনই জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।
তার সতর্কবার্তা—যদি এসব নোট বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে, এমনকি সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত দেশের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
জুলকারনাইনের পোস্ট প্রকাশের পর সচেতন মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষকে ব্যাংক লেনদেন ও বাজারে টাকা ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো সন্দেহজনক নোট দেখা গেলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
তার মতে, তার দেওয়া তথ্য যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এটি শুধু অর্থনৈতিক হামলা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। তাই তিনি এ ঘটনার স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জনতারটিভির— পক্ষ থেকে জুলকারনাইনের এই তথ্য-উপাত্ত স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :