তরুণ পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতার সমস্যা বাড়ছে। কিছু বিশেষজ্ঞ এটিকে নীরব মহামারি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেমিস্ট ফর ইউ-এর যৌন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২৫-৩৪ বছর বয়সী প্রতি তিনজনের মধ্যে দুইজনই কখনও না কখনও লিঙ্গ শক্ত রাখা বা যৌন মিলনে সমস্যা অনুভব করেছেন। সাধারণত এই সমস্যা বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে এখন তরুণদের মধ্যেও এর হার বেড়ে চলেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৮-২৪ বছর বয়সী পুরুষদের অর্ধেকেরও বেশি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। কেমিস্ট ফর ইউ দুই হাজার-এর বেশি পুরুষের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করেছে এই সমস্যার প্রাদুর্ভাব বোঝার জন্য। জরিপের একটি কারণ হলো- অনলাইনে ভাইগ্রা—একটি পরিচিত ওষুধ যা সিলডেনাফিল নামে পরিচিত—সম্পর্কিত প্রশ্নের বিস্ময়কর বৃদ্ধি লক্ষ্য করা। শুধুমাত্র গত ৯০ দিনে ‘ভাইগ্রা কি সবার জন্য কার্যকর? এবং ‘যৌন মিলনের কতক্ষণ আগে ভাইগ্রা নেয়া উচিত?’ এর মতো প্রশ্নের সংখ্যা ৫ হাজার শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেমিস্ট ফর ইউ-এর ফার্মাসিস্ট ইয়ান বাড বলেন, আমাদের জরিপ দেখিয়েছে যে যুক্তরাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি পুরুষ যৌন সমস্যার কথা রিপোর্ট করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে এই সমস্যা এখন অনেক সাধারণ। তরুণদের মধ্যে এই সমস্যার কারণ হতে পারে শারীরিক, মানসিক ও জীবনধারার বিভিন্ন সমস্যা—যেমন মদ্যপান, চাপ, ব্যায়ামের অভাব এবং হৃদরোগের ঝুঁকি। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিষণ্নতা এবং পারফরম্যান্স উদ্বেগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ইয়ান বাড বলেন, যারা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তারা শুধু ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না, বরং তাদের উপসর্গগুলো ট্র্যাক করুন যাতে সম্ভাব্য কারণগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। পাশাপাশি জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব। আপনাকে যৌন অক্ষমতা একা বা নীরবে মোকাবিলা করতে হবে না।
কার্যকরী চিকিৎসা উপলব্ধ রয়েছে, এবং প্রায়ই ছোট ছোট জীবনধারার পরিবর্তনও বড় পার্থক্য আনতে পারে। আপনার সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা মানসিক চাপ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তিনি বলেন।
২০২৫ সালের জুলাইয়ে করা জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের দক্ষিণের শহরগুলোতে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি।উদাহরণস্বরূপ, ব্রাইটনের ৭০ শতাংশের বেশি পুরুষ এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, এরপর আছে ব্যাথ শহর। তবে ব্রিস্টলে মাত্র ৪৯ শতাংশ পুরুষ স্বীকার করেছেন যে তারা যৌন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, যা জাতীয় গড় ৫৭ শতাংশের নিচে।
গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্ম অনলাইনে সমাধান খুঁজতে পছন্দ করে; মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ প্রথমে চিকিৎসা পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এবং ১০ শতাংশের বেশি পুরুষ কোনো সাহায্যই চাইবেন না। যাইহোক, ভবিষ্যতে সহায়তার জন্য ব্যক্তিগত জিপি অ্যাপয়েন্টমেন্টই এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয়, যেখানে ৪৩ শতাংশের বেশি পুরুষ এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। এছাড়াও কেমিস্ট ফর ইউ ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ প্রদান করে এবং অনলাইনে পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেয়।
ডাক্তাররা সতর্ক করেছেন যে, পর্নোগ্রাফি দেখা তরুণদের মধ্যে যৌন সমস্যার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। মাঝে মাঝে পর্ন দেখা ক্ষতিকর নয়, তবে নিয়মিত বা দীর্ঘ সময় পর্ন দেখা মস্তিষ্ককে পুনরায় প্রশিক্ষণ দিতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবে উত্তেজিত হওয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়া, পর্ন পুরুষদের মধ্যে তাদের পুরুষত্ব বা যৌন স্থায়িত্ব সম্পর্কে অবাস্তব ধারণা তৈরি করতে পারে, যা পারফরম্যান্স উদ্বেগজনিত যৌন সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়।
সূত্র-ডেইলি মেইল
আপনার মতামত লিখুন :