সমাজের নিষ্ঠুর যুপকাষ্ঠের বলি হয়ে দীর্ঘ তিন যুগ একঘরে রাখা হয়েছিল ধনঞ্জয় দম্পতিকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ধনঞ্জয় দাস (৭০) ও শ্রীমতি রানী দাস (৭২) নামের এক নিঃসন্তান দম্পতি ৩৬ বছর ধরে সমাজচ্যুত হয়ে জীবন কাটিয়েছেন প্রথম সংসার থাকা অবস্থায় বিয়ে করার নিচক অপরাধে।
সোহাতা গুঞ্জন পাঠাগারের পরিচালক লেখক ও প্রভাষক স্বপন মিয়ার ফেসবুকে বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর গণমাধ্যমের নজরে আসে বিষয়টি। দেশের জাতীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় খবরটি ফলাও করে প্রচার হয়।
গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোচনায় আসার পর সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে স্থানীয় সমাজপতিরা বৈঠক করে তাদের সমাজে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন।
নবীনগর পৌরসভার ভোলাচং দাসপাড়ার এই ঘটনা দেশ জোড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বুধবার সকালে ধনঞ্জয় দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৯শতক বাড়িতে একতলা ভবন করে দম্পতি নিঃসঙ্গভাবে বসবাস করছেন।
ধনঞ্জয় বলেন, ‘৩৬ বছর ধরে সমাজপতিরা আমি সংসার থাকার পরও বিয়ে করায় আমাদের একঘরে রেখেছিল। গতকাল বৈঠকে আমি সবার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলে তারা সমাজে ফেরার সিদ্ধান্ত দেন।’
ধনঞ্জয়ের বলেন ১৯৮৫ সালে তার প্রথম স্ত্রী বিহঙ্গী রানী দাস এক কন্যা সন্তান নিয়ে চলে যান। পরে তিনি প্রতিবেশী শ্রীমতি রানী দাসের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
শ্রীমতি রানী তখন তিন ছেলে ও এক মেয়ের মা এবং অনিল চন্দ্র দাসের স্ত্রী। ১৯৮৯ সালে তিনি স্বামী ও সন্তানদের ছেড়ে ধনঞ্জয়কে বিয়ে করেন।
এর পর থেকেই দাসপাড়ার তৎকালীন সমাজপতিরা তাদের একঘরে রাখেন।
শ্রীমতি রানী বলেন, ‘স্বামী ও সন্তান রেখে নতুন করে বিয়ে করায় পাড়ার কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলত না, বাড়িতে আসত না।
বিয়ে,পূজা,সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও ডাকত না। ৩৬ বছর এভাবে নিঃসঙ্গ ও সন্তানহীন জীবন কাটানো কতটা কষ্টের, তা ভাষায় বলা যায় না।’
প্রভাষক স্বপন মিয়া বলেন, ‘বর্তমান সমাজপতিরা বিষয়টি মীমাংসা করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বর্তমান সমাজপতি সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘তৎকালীন মুরব্বিরা সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে গণমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা বৈঠক করে ধনঞ্জয় ও শ্রীমতিকে সমাজে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কেইউ/জনতারটিভি
আপনার মতামত লিখুন :