জ্বর (Fever) মানুষের শরীরের একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত সংক্রমণ বা শরীরের অন্যান্য সমস্যা থাকার সংকেত দেয়। এটি মূলত শরীরের ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রক্রিয়ার অংশ। অনেক সময় জ্বর হালকা ও স্বল্পকালীন হলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী বা অত্যধিক হলে সতর্ক হওয়া জরুরি। নিচে জ্বরের কারণ ও চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে-
জ্বরের প্রধান কারণ কি কি
১. সংক্রমণ:
বেশিরভাগ জ্বর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়। সাধারণ সর্দি, ফ্লু, টোনসিলাইটিস, ম্যালেরিয়া বা ডায়রিয়া ইত্যাদি সংক্রমণ জ্বরের সাধারণ কারণ।
২. ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া:
কখনও কখনও শরীরের ইমিউন সিস্টেম টিস্যু বা অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাতে জ্বর সৃষ্টি করে। অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে এটি দেখা দিতে পারে।
৩. ওষুধ বা প্রতিক্রিয়া:
কিছু ওষুধ বা টিকা নেওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য থাকে এবং ক্ষতিকর নয়।
৪. অন্যান্য শারীরিক সমস্যা:
হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, লিভারের রোগ বা ত্বকের সংক্রমণও জ্বরের কারণ হতে পারে।
জ্বরের লক্ষণগুলো কি কি
জ্বরের সঙ্গে সাধারণত নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
- মাথা ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট বা ক্লান্তি
- দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যথা
- ঠান্ডা লাগা বা শীতলতা অনুভূতি
- ঘাম হওয়া বা তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি
জ্বর হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত, হালকা জ্বর কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যায়। তবে, কিছু পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন:
- যদি জ্বর ১০৩°F (৩৯.৪°C) এর উপরে থাকে।
- জ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা।
- শরীরে র্যাশ বা ফুসকুড়ি।
- যদি জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় এবং কোনোভাবেই না কমে।
জ্বরের চিকিৎসা
১. বিশ্রাম:
শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া জ্বর কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. প্রচুর পানি পান:
জ্বর হলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস বা স্যুপ খাওয়া উচিত।
৩. হালকা খাদ্য গ্রহণ:
হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীর দ্রুত শক্তি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৪. ওষুধের ব্যবহার:
যদি জ্বর খুব বেশি হয়, তবে প্যারাসিটামল বা অন্যান্য প্রেসক্রিপশন ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ডাক্তার পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ নেওয়া উচিত নয়।
৫. ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মোছা:
কপালে বা শরীরে ঠান্ডা জলের ভেজা কাপড় দিলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে।
৬. ডাক্তারের পরামর্শ:
৭২ ঘণ্টার বেশি জ্বর থাকলে, খুব বেশি তাপমাত্রা বা অন্যান্য জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
জ্বর হলে কী ওষুধ খাবেন
জ্বর কমানোর জন্য সাধারণত ব্যবহার করা হয় প্যারাসিটামল (Paracetamol) এবং কিছু ক্ষেত্রে ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen)। তবে জ্বরের ওষুধ নির্বাচনের আগে জ্বরের কারণ এবং বয়স বিবেচনা করা জরুরি। নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো:
১. প্যারাসিটামল (Paracetamol):
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণ ডোজ: ৫০০–১০০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৪–৬ ঘণ্টা অন্তর (প্রতি দিনে সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম)
- শিশুদের জন্য: বয়স এবং ওজন অনুযায়ী ডোজ পরিবর্তিত হয় (ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত)
- সুবিধা: সহজভাবে জ্বর কমায়, হালকা ব্যথা উপশম করে
- সতর্কতা: লিভারের সমস্যা থাকলে সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে
২. ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen):
- সাধারণত ২০০–৪০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৬–৮ ঘণ্টা অন্তর
- সুবিধা: জ্বর কমানো ছাড়াও ব্যথা ও প্রদাহ কমায়
- সতর্কতা: অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা কিডনির সমস্যা থাকলে সাবধান
- শিশুদের জন্য: Pediatric suspension আকারে দেওয়া হয়, ডোজ ডাক্তার নির্দেশ অনুযায়ী
৩. অন্যান্য ওষুধ
- এ্যাসপিরিন (Aspirin): বড়দের জন্য ব্যবহার করা হয়, শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ (Reye’s Syndrome এর কারণে)
- কম্বিনেশন ওষুধ: কিছু জ্বর কমানোর ওষুধে প্যারাসিটামল ও অন্যান্য উপাদান মিশ্রিত থাকে, তবে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত
জরুরি সতর্কতা
- জ্বর ৩ দিনের বেশি থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন
- অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ করা বিপজ্জনক হতে পারে
- শিশুর জ্বর, গর্ভবতী মহিলা বা কিডনি/লিভারের সমস্যা থাকলে বিশেষ যত্ন নিন
জ্বর প্রায়শই শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অংশ, তবে এটি কখনও কখনও গুরুতর অসুস্থতার সংকেতও হতে পারে। সংক্রমণ, ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া, ওষুধ বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে জ্বর হতে পারে। সঠিক বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে জ্বর দ্রুত নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আরো পড়ুন: তরুণ পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতার সমস্যা বাড়ার বিষয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
আপনার মতামত লিখুন :