• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:০৮ পিএম

বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই

ফরিদা পারভীন

বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি চার সন্তান ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার ছেলে ইমাম জাফর নোমানী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

জন্ম ও শৈশব
বাংলাদেশের লোকসংগীত অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ফরিদা পারভীন। লালন সঙ্গীতকে দেশ-বিদেশে পরিচিত করার জন্য তিনি বিশেষভাবে প্রশংসিত। দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গান গেয়ে আসা ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর জেলায়। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কুষ্টিয়ায়, যে অঞ্চল লালন ফকিরের আধ্যাত্মিক দর্শন ও সঙ্গীতের জন্য সুপরিচিত। ছোটবেলা থেকেই গান শেখার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল।

সংগীত শিক্ষা
তিনি প্রথমে কমল চক্রবর্তীর কাছে গান শেখা শুরু করেন। পরবর্তীতে উস্তাদ ইব্রাহিম খান, উস্তাদ রবিশংকর রায়, উস্তাদ ওসমান গনি, উস্তাদ মুতালেব বিশ্বাস, উস্তাদ মীর মুজাফফর আলী ও উস্তাদ আবদুল কাদেরের মতো খ্যাতিমান গুরুদের কাছ থেকে ক্লাসিক্যাল ও নাজরুল সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন। তবে তাঁর লালন সঙ্গীতের গুরু ছিলেন মক্সেদ আলী শাহ, যিনি ফরিদাকে লালনের দার্শনিক ভাবনা ও সুরের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছিলেন।

সংগীতজীবনের শুরু
১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নাজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ফরিদা পারভীন। পরে ধীরে ধীরে তিনি লালন সঙ্গীতে মনোনিবেশ করেন এবং দ্রুতই এই ধারার শীর্ষ শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৭৩ সালে তাঁর গাওয়া দেশাত্মবোধক গান “এই পদ্মা এই মেঘনা” এবং লালনের গান “সত্য বল সপথে চল” ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

লালন সঙ্গীতের দূত
ফরিদা পারভীনকে লালন সঙ্গীতের জীবন্ত দূত বলা হয়। তাঁর কণ্ঠে “তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদের নাম”, “নিন্দার কাঁটা যদি”, “সত্য বল সপথে চল” সহ অসংখ্য লালন গান এক অনন্য ব্যঞ্জনা লাভ করেছে। তিনি দেশ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান করে লালন সঙ্গীতকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।
  • ১৯৮৭ সালে একুশে পদক
  • ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সেরা নারী প্লেব্যাক শিল্পী, চলচ্চিত্র আন্ধো প্রেম)
  • ২০০৮ সালে Fukuoka Asian Culture Prize

এছাড়াও পেয়েছেন আনোয়ারা টপ টেন অ্যাওয়ার্ড, ফিরোজা বেগম স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।

ব্যক্তিগত জীবন ও কাজ
ফরিদা পারভীনের স্বামী ছিলেন গীতিকার ও সুরকার আবু জাফর। তিনি কুষ্টিয়ায় “অচিন পাখি” নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যেখানে তরুণদের লালন সঙ্গীত শেখানো হয়।

আরো পড়ুন: কসম খেয়ে বলছি কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করিনি: মেঘনা আলম

Link copied!