আজকের দিনে ইনফ্লুয়েন্সার মানেই গ্ল্যামার, ফ্যাশন আর ঝলমলে জীবন। তারা লাখো ভক্তের অনুপ্রেরণা, ট্রেন্ডের পথপ্রদর্শক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার রঙিন জগতে একেকজন সেলিব্রিটি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরো ২৫ বছর পর এই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।
সম্প্রতি বিনোদনভিত্তিক ওয়েবসাইট Casino.org প্রকাশ করেছে এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। সেখানে কল্পিত এক মডেল অ্যাভার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, ২০৫০ সালের ইনফ্লুয়েন্সাররা দেখতে কেমন হতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর সৌন্দর্যচর্চা আর অনিয়মিত জীবনযাত্রা মিলেই তৈরি করবে ভয়াবহ পরিবর্তন। চিকিৎসা গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি এই চরিত্রে ফুটে উঠেছে ২০৫০ সালের ইনফ্লুয়েন্সারদের সম্ভাব্য চেহারা।
অ্যাভা কেমন দেখাবে?
মডেল অ্যাভার চেহারায় রয়েছে—দাগযুক্ত এবং প্যাঁচা ত্বক, কুঁজো পিঠ ও ঘাড়ে স্থায়ী ব্যথা, চোখের নিচে ভারী কালচে ব্যাগ ও ফোলা, তীক্ষ্ণ ‘ডাইনির থুতনি’, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া ও টাক পড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাভা হলো ভবিষ্যতের ইনফ্লুয়েন্সারের প্রতিচ্ছবি। তবে এটি একই সঙ্গে আজকের প্রজন্মের জন্যও সতর্কবার্তা। বহু বছর ধরে অ্যালগরিদমের পেছনে ছোটা, সৌন্দর্যের মানদণ্ডে আসক্তি এবং ক্রমাগত কনটেন্ট তৈরির প্রভাবই এ রূপের জন্ম দেয়। লাস ভেগাসের ব্র্যান্ড ট্রিপ থেকে শুরু করে প্রতিদিনের ফিল্টার ব্যবহার ও ফটোশুট—অ্যাভা–র জীবনযাপনের প্রতিটি অভ্যাস তার চেহারায় নেতিবাচক ছাপ ফেলেছে।
বিবিসির ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ইনফ্লুয়েন্সার সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেন। এর বড় অংশ কাটে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের সামনে। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে—মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা, কুঁজো কাঁধ, ঘাড়ে স্থায়ী ব্যথা হয়।
ভারী মেকআপ, ঘন ঘন স্কিনকেয়ার পণ্য পরিবর্তন এবং এলইডি আলোতে দীর্ঘ সময় এক্সপোজার ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে—কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস ও প্রদাহ, দাগযুক্ত ত্বক, সূক্ষ্ম রেখা ও বার্ধক্য দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি ‘ডিজিটাল এজিং’, যা ত্বকে রঙের পরিবর্তন, সূক্ষ্ম রেখা এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘ সময় ভিডিও এডিটিং, লাইভ স্ট্রিমিং এবং উজ্জ্বল স্ক্রিনের দিকে তাকানোর ফলে অ্যাভার চোখের নিচে কালো ব্যাগ ও ফোলা দেখা দেয়। এছাড়া চোখে থাকে লালচে ভাব, শুষ্কতা এবং ঝাপসা দেখা। রাত জেগে কাজ এবং অনিয়মিত ঘুমের কারণে অ্যাভার প্রাকৃতিক ঘুমের চক্র নষ্ট হয়।
বর্তমানে কসমেটিক ফিলার খুব জনপ্রিয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখের বেশি মানুষ মুখে ফিলার নিয়েছে, বিশেষ করে ঠোঁট ও গালের আকার পরিবর্তনের জন্য।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন—অতিরিক্ত ফিলারের কারণে গাল ফুলে যায়, তীক্ষ্ণ ‘ডাইনির থুতনি’ তৈরি হয়, মুখে কৃত্রিম ও অস্বাভাবিক টেক্সচার হয়। বছরের পর বছর ভারী এক্সটেনশন এবং টাইট হেয়ারস্টাইল ব্যবহারের ফলে চুলের ফলিকল দুর্বল হয়। এর ফলে—মাথায় টাক পড়া, হেয়ারলাইন পিছিয়ে যাওয়া, স্থায়ীভাবে চুল পাতলা হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদমের দৌড়, সৌন্দর্যের নামে অতিরিক্ত কৃত্রিমতা এবং প্রযুক্তির অস্বাস্থ্যকর ব্যবহার যদি অব্যাহত থাকে, তবে ২০৫০ সালে ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা আজকের গ্ল্যামারাস রূপ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। ‘অ্যাভা’ কেবল একটি কল্পিত মডেল নয়, বরং আজকের প্রজন্মের জন্য এক শক্তিশালী সতর্কবার্তা।
সূত্র: ডেইলি মেইল
আপনার মতামত লিখুন :