• ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫
পরীক্ষামূলক সংস্করণ
রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে আশা দেখছে বিএনপি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে আশা দেখছে বিএনপি

‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ ঘিরে তিন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, চোখমুখে আগামী নিয়ে ভাবনায় আশার আলো দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এতদিন দেশজুড়ে বিভাগীয় কর্মসূচি শেষে ঢাকায় স্মরণকালের সেরা সমাবেশের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন আয়োজক বিএনপির তিন সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতারা। তীব্র গরমের মধ্যেও ঢাকা মহানগরের বাইরেও অন্যান্য জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢল অতীতের সব সমাবেশকে পেছনে ফেলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশেও দলের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এসব তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কথা উঠে আসে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কণ্ঠে। অন্যদিকে আগতরা গণতান্ত্রিক ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার কথা বলেছেন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের মানুষকে কাছে টানতে, দলকে প্রস্তুত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন আগত তরুণরা।

তরুণদের কাছে টানতে মে মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির এই তিন সংগঠন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল চারটি বড় বিভাগ ও শহরে দুই দিন করে মোট আট দিন সেমিনার ও সমাবেশ। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়ায় সেমিনার ও সমাবেশ হয়েছে। সবশেষ আয়োজন ছিল ঢাকায়। মঙ্গলবার ছিল সেমিনার। বুধবার নয়াপল্টনে হয়েছে সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

আয়োজকদের ভাষ্য, তরুণদের নিয়ে ধারাবাহিক সেমিনার ও সমাবেশ কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি একটি বৃহৎ নীতিগত প্রয়াস। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রচিন্তায় তরুণদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

সমাবেশে যোগ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, তরুণদের এই আন্দোলন আমাদের দারুণভাবে আন্দোলিত করেছে। এই বয়সে আমরা এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বেগম খালেদা জিয়াকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী করেছিলাম। আপনারাও (তরুণরা) তারেক রহমানের নেতৃত্বে আবারও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবেন।

সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বক্তব্যে তরুণদের নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কি কি কর্মপরিকল্পনা আছে তা তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, ‘গ্লোবালাইজেশনের এই সময়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা এখন আর স্বপ্ন দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখন সকলের সামনে সম্ভাবনার সকল দার উন্মুক্ত। এই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি এবং সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে আমাদেরকে। আর কথামালার রাজনীতি নয়। বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতি নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি। এখন বাস্তবায়ন আর দৃষ্টান্ত স্থাপনের রাজনীতি।’

নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার সংযুক্ত হয়েছে জানিয়ে তারেক বলেন, ‘এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি।’

আয়োজক সংগঠন যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সব বয়সের, রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে সব পেশার মানুষের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এটা কারও একক আন্দোলন ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্টের পর অনেকেই বিভ্রান্তিমূলক কথা বলতে শুরু করেন। নিজেদের তরুণদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের বাইরেও বিএনপি যে সব বয়সী, সব পেশার মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল তা প্রমাণের জন্যই তারুণ্যের সমাবেশ। আমরা বিশ্বাস করি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি বলেন, পরবর্তীতে সমাবেশগুলোতে আমরা বার্তা দিয়েছি রাজনীতির বাইরে থাকলেও বিএনপি তরুণদের মেধা, মনন ও যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করবে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের দলের প্রতি যে আনুগত্য দেখিয়েছে তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে ঢাকার ঐতিহাসিক সমাবেশে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও তারা অবস্থান বদলায়নি। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, সমাবেশগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা তরুণদের নিয়ে বিএনপির ভাবনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তরুণদের জন্য নিজের ভাবনা, বিএনপির চিন্তা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। আর অর্জনের কথা যদি বলি তাহলেও নিজেদের শতভাগ সফল দাবি করতে পারি। কারণ দীর্ঘদিন ভোটাধিকার বঞ্চিত তরুণরা  ক্ষুব্ধ ছিল, সেই তরুণদের ভাবনাও আমরা জানতে পেরেছি। আমরা বলেছি তরুণদের মতামতের ভিত্তিতেই নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে। তরুণরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নেতৃত্ব বাছাই করবেন। এসব ভাবনা ইতিবাচক হিসেবে নেয়ার কারণেই রাজনীতি সচেতন  বিপুল সংখ্যক তরুণ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে।

কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে নয়াপল্টনে তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দেওয়া বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব কামরুল ইসলাম বলেন, খুলনার কর্মসূচিতে আমরা অংশ নিয়েছি। ঢাকায় তারুণ্যের ডাকে বরিশালে বসে থাকতে পারিনি। তাই নেতাকর্মীদের নিয়ে লঞ্চে ও বাসে করে এসেছি। আমাদের অধিকার আদায়ের সময় এসেছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্যদিয়েই আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। চলতি বছরের মধ্যেই আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট দিতে চাই।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী মোখতার হোসাইন বলেন, এই সমাবেশকে রাজনৈতিক কর্মসূচির পরিমণ্ডলে চিন্তা করার সুযোগ নেই। এটা হলো ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে গভীর চিন্তা, তারুণ্যের প্রত্যয় আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দৃঢ় সংকল্প। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করার বার্তা পেয়েছি। এখন দলকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে নামবো।

বেসরকারি  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, ভবিষ্যৎ যদি অনিশ্চিত হয়, তবে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আমি আমার ভোটের অধিকার ফিরে পেতে এই সমাবেশে এসেছি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করলেও আমরা ভোটের অধিকার ফিরে পাইনি। ভোটাধিকার নিশ্চিত করে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।

এদিন দুপুর সাড়ে তিনটার পর সমাবেশ শুরু হলেও সকাল ১১টা মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত তরুণ-তরুণীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের সড়কে জড়ো হন। যাদের বেশিরভাগই তরুণ। তাদের হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, মাথায় জাতীয় পতাকা আর মুখে ছিল স্লোগান। ‘এই মুহূর্তে দরকার, নির্বাচিত সরকার’, ‘ভোটাধিকার ফিরিয়ে দাও, গণতন্ত্র ফেরত দাও’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’সহ নানা আওয়াজে প্রকম্পিত হয় পুরো নয়াপল্টন এলাকা। সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের ক্যাপ ও টি-শার্ট পরে তারা সমাবেশে যোগ দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

দুপুর ১২টার মধ্যে সমাবেশস্থল পেরিয়ে তারুণ্যের ঢল নামে- বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, জিরো পয়েন্ট, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, শাহবাগ ও মৎস ভবনসহ বিভিন্ন এলাকায়। এতে নয়াপল্টনের আশপাশের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। অনেকটা স্থবির সড়কে সাধারণ মানুষকে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে ফ্রি চিকিৎসার আয়োজন করেছে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিকেল সাড়ে তিনটায় আনুষ্ঠানিকভাবে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়। ৪টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এদিকে সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তীব্র রোদ উপেক্ষা করে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বক্তব্য শুনেন। ৪টার দিকে পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় শুরু হয় বৃষ্টি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিএনপির সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা। বৃষ্টি শুরু হলেও সমাবেশস্থলে থাকা নেতাকর্মীরা বৃষ্টিতে ভিজেই দলের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য শুনেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, যত বৃষ্টি হোক কেউ জায়গা ছাড়বেন না। পরে বক্তব্য দিতে উঠে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কেউ জায়গা ছাড়বেন না। ঝড়-বৃষ্টি যতই হোক কেউ জায়গা ছাড়বেন না। আমাদের মঞ্চেও যারা আছি তারাও ভিজে যাব।

এদিকে তারুণ্যের সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে সমাবেশ হলেও সারাদেশে থেকে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। তাদের কেউ এসেছে একদিন আগে, কেউ ভোর রাতে, কেউবা সকালে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে তারা তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দেন।

Link copied!