• ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

এবার বন্ধ হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

এবার বন্ধ হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

অনিয়ম, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে থাকা ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবশেষে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে অক্ষমতা, বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবং মূলধনের ঘাটতি—এই তিনটি প্রধান কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর বা ‘অব্যবহারযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যাংকের রেজুলেশন ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অবসায়নের সময় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চাকরিবিধি অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য সুবিধা পাবেন।

যে ৯ প্রতিষ্ঠান বন্ধের আওতায় আসছে-

১. পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
২. ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
৩. আভিভা ফাইন্যান্স
৪. এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
৫. ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
৬. বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)
৭. প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স
৮. জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি
৯. প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

সরকারের প্রাথমিক হিসাবে, এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের জমা অর্থ ফেরত দেওয়াই মূল অগ্রাধিকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সব ঋণই খেলাপি। উদাহরণস্বরূপ, এফএএস ফাইন্যান্সের মোট ঋণের ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপি, প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ১ হাজার ১৭ কোটি। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ৪ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে পিপলস লিজিং, যার ৯৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি এবং লোকসান ৪ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আভিভা ফাইন্যান্সের ৮৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৭৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি। জিএসপি ফাইন্যান্সের ৫৯ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা। আর প্রাইম ফাইন্যান্সের ৭৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৫১ কোটি টাকায়।

২০২৩ সালে প্রণীত ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন’-এর ৭(১) ধারা অনুযায়ী, আমানতকারীর স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম, দায় পরিশোধে অক্ষমতা এবং মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থতার কারণে লাইসেন্স বাতিল করা যায়। একই আইনের ৭(২) ধারা অনুসারে, লাইসেন্স বাতিলের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হয়। গত ২২ মে এসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়ার পরও সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক চূড়ান্তভাবে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Link copied!