ভয়াবহ যুদ্ধে লড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও ইসরায়েল। এরই মধ্যে বিশ্লেষকরা দেশ দুটির দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে ইরানের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে- দেশটির প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ঘাটতি এবং গোয়েন্দা দুর্বলতা। শত্রুদের হামলার আগাম তথ্য বরাবরই পেতে ব্যর্থ হয় দেশটির সেনাবাহিনী।
ইরানে ধরা পড়া মোসাদের অধিকাংশ এজেন্ট ভারতীয়রা। চাবাহার বন্দর পরিচালনার আড়ালে ভারতীয়রা ইরানে গোয়েন্দা নজরদারি করে এবং ইসরায়েলের কাছে সব কিছুর তথ্য পাঠায়।
ইসরায়েল যখন ইরানে আক্রমণ শুরু করে তখন প্রথম দিকে ইরান কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি। ইরানের যতগুলো এয়ার ডিফেন্স ধ্বংস হয়েছে, তার অধিকাংশই প্রথম আক্রমণে ধ্বংস হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এগুলো সব ইসরায়েল যুদ্ধ বিমানের হামলায় ধ্বংস হয়নি। বরং দেশের ভিতর থেকে স্যাবোটাজ করা হয়েছে। ভিতর থেকে মোসাদের স্থানীয় এজেন্টরা ইরানের ভিতর থেকেই মাইক্রো ড্রোন অপারেট করে পিন পয়েন্ট অ্যাকুরেসিতে হামলা করে।
ভারতীয়রা ইসরায়েলের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করে এবং তথ্য সংগ্রহ করে। আর মোসাদের ইরানি এজেন্টরা সেই তথ্য অনুযায়ী দেশের ভিতর থেকে হামলাগুলো করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের দুর্বলতা হচ্ছে এটির ছোট আয়তন। ইরানের মতো বিশাল আয়তনের দেশ থেকে ছোট দেশ ইসরায়েলে হামলা করলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে যে কয়টা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, তাতেই বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে ইহুদিবাদী দেশটি।
এছাড়া, গাজায় চলমান আগ্রাসনের পাশাপাশি লেবানন ও ইয়েমেনে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তবে ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে যদি ইসরায়েল পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে যায়, তবে তেলআবিবের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
একদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, অন্যদিকে ইয়েমেনের হুথির হামলা এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজায় হামাসের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে অনেক সেনা হারিয়েছে ইসরায়েল। অনেক আইডিএফ সদস্য এখন আহত অবস্থায় আছেন।
এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একযোগে হামলা চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য ইসরায়েলের নেই। তেহরানের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের বিরুদ্ধে বড় মাত্রার যুদ্ধে তেলআবিবের সামরিক শক্তি কমে গেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের বিরুদ্ধে এতদিন ধরে যুদ্ধ করে আসছে ইসরায়েল। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেন, সিরিয়া এবং ইরাকের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে অংশ নিলে ইসরায়েলের সফলতার সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেছেন এক ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ।
এদিকে, ইসরায়েলের হামলা রুখতে দশ ধরনের পূর্ব পরিকল্পনা নিয়েছে ইরান। সোমবার ইরানের রেভ্যুল্যুশনারি গার্ড কোরের বরাত দিয়ে ইরানি গণমাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সি এ তথ্য জানায়।
দশটি হামলার কয়েকটিও যদি বাস্তবায়ন করা হয় তবে মাত্র ২২ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইসরায়েলের অবস্থা হবে ভয়াবহ। ইরানের হামলা ইসরায়েলের হামলার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে বলেও জানানো হয়।
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। যেমন, ১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন দেশটিকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ইরান। প্রতিষ্ঠার ওই সময়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বৈরিতায় টিকে থাকতে ইরানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে ইসরায়েল।
মজার বিষয় হলো, সেই সময় বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুদেশের সম্পর্ক ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ। যেমন ইরানে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিত ইসরায়েল। তাছাড়া ইরানের আর্মড ফোর্স গঠনে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসারেও সহায়তা করত ইসরায়েল। এর বিনিময়ে নতুন জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রটিকে তখন জ্বালানি সহায়তা দেয় তেহরান।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের বাইরে ইরানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ইহুদি বসবাস করতেন। তবে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইহুদিদের একটি বড় অংশ ইরান ত্যাগ করে। বর্তমানে ইরানে বসবাসরত ইহুদিদের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে আয়াতউল্লাহ রুহোল্লা খোমেনি ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের সঙ্গে আগের সব চুক্তি বাতিল করে ইরান। ক্ষমতায় এসে ‘ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলের` জন্য ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেন খোমেনি।
এরপর ধীরে ধীরে ইসরায়েলের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে থাকে ইরান। এর লক্ষ্য ছিল আরব রাষ্ট্রগুলোর, কিংবা রাষ্ট্রগুলোর জনগণের সমর্থন আদায় করা। তাছাড়া এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আগ্রহী ছিল ইরান।
১৯৮২ সালে ইসরায়েল যখন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে চলমান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, ইরানের খোমেনি সরকার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থনে ইরানি রেভোলিউশনারি গার্ড সদস্যদের পাঠায়। এই সমর্থনের মাধ্যমে তৈরি হয় হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার সদস্যরা বর্তমানে লেবাননে ইরানের ‘প্রক্সি’ হিসেবে পরিচিত।
আপনার মতামত লিখুন :